অ্যার্জে
জর্জ প্রস্প্যার র্যমি (, ; ২২শে মে ১৯০৭ – ৩রা মার্চ ১৯৮৩), যিনি তাঁর অ্যার্জে (Hergé, ) ছদ্মনামে বেশি পরিচিত, ছিলেন একজন বেলজীয় কমিক্স ও কার্টুন শিল্পী। তাঁর নামের উল্টোনো আদ্যক্ষর ''RG''-এর ফরাসি উচ্চারণ ''অ্যার জে'' থেকেই অ্যার্জে নামকরণ। ''দুঃসাহসী টিনটিন'' নামক কমিক অ্যালবাম ধারাবাহিকের স্রষ্টা হিসেবে তিনি সুপরিচিত, যা ২০শ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউরোপীয় কমিক সিরিজগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি আরও দুটো জনপ্রিয় সিরিজেরও রচয়িতা ছিলেন: ''কুইক ও ফ্ল্যুপক'' (১৯৩০–১৯৪০) এবং ''জো, জেট ও জোকো'' (১৯৩৬–১৯৫৭)। তাঁর সব কাজেই ছিল তাঁর স্বতন্ত্র ''লিন ক্ল্যার'' শিল্পশৈলীর ছাপ।ব্রাসেলসের এত্যরবেকে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া অ্যার্জে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন স্কাউটিং ম্যাগাজিনে চিত্রাঙ্কন দিয়ে। ১৯২৬ সালে ''ল্য বয়-স্কাউট বেল্জ'' পত্রিকার জন্য তিনি তাঁর প্রথম কমিক সিরিজ ''তোতোরের দুঃসাহসিক অভিযান'' তৈরি করেন। রক্ষণশীল ক্যাথলিক সংবাদপত্র ''ল্য ভ্যাঁতিয়েম সিয়েক্ল''-এ কাজ করার সময়, সম্পাদক নরব্যার ভালেজের পরামর্শে তিনি ১৯২৯ সালে ''লেজ় আভঁত্যুর দ্য ত্যাঁত্যাঁ'' তথা ''দুঃসাহসী টিনটিন'' সিরিজটি তৈরি করেন। বালক প্রতিবেদক টিনটিন এবং তার কুকুর মিলু ওরফে কুট্টুসকে ঘিরে আবর্তিত এই সিরিজের প্রথম দিককার পর্বগুলো — ''সোভিয়েত দেশে টিনটিন'', ''কঙ্গোয় টিনটিন'' ও ''আমেরিকায় টিনটিন'' — শিশুদের জন্য রক্ষণশীল প্রোপাগান্ডা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। দেশে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং ধারাবাহিক প্রকাশের পর গল্পগুলো বই আকারে ছাপা হয়। অ্যার্জে সিরিজটি চালিয়ে যান এবং পাশাপাশি ''কুইক ও ফ্ল্যুপ্ক'' এবং ''জো, জেট ও জোকো'' সিরিজও ল্য ভ্যাঁতিয়েম সিয়েক্ল কাগজের জন্য তৈরি করেন। ১৯৩৪ সাল থেকে তাঁর চীনা বন্ধু ঝাং চংগ্রেনের প্রভাবের ফলে অ্যার্জে গবেষণার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন, যার ফলে ''নীলকমল'' থেকে সিরিজে বাস্তবতার মাত্রা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
১৯৪০ সালে বেলজিয়ামে জর্মন অধিগ্রহণের পর ল্য ভ্যাঁতিয়েম সিয়েক্ল বন্ধ হয়ে যায়, তবে অ্যার্জে তাঁর সিরিজ চালিয়ে যান ''ল্য সোয়ার'' পত্রিকায়, যা নাৎসি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র ছিল।
১৯৪৪ সালে মিত্রবাহিনীর হাতে বেলজিয়াম মুক্ত হওয়ার পর ল্য সোয়ার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তার কর্মীদের—অ্যার্জে-সমেত—নাৎসি সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়, যদিও অ্যার্জের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তবুও পরবর্তী বছরগুলিতে তাঁকে বারবার বিশ্বাসঘাতক এবং সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে হয়েছে। ১৯৪৬ সালে রেমোঁ ল্যব্লঁর সঙ্গে তিনি ''টিনটিন'' ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি নতুন দুঃসাহসী টিনটিন সিরিজ প্রকাশ করেন। ম্যাগাজিনের শিল্প-পরিচালক হিসেবে তিনি অন্যান্য সফল কমিক সিরিজ প্রকাশেও তদারকি করেন, যেমন এডগার পি. জ্যাকবসের ''ব্লেক ও মর্টিমার''। ১৯৫০ সালে তিনি স্তুদিও অ্যার্জে প্রতিষ্ঠা করেন যাতে একটি দল তাঁকে চলমান প্রকল্পে সহায়তা করতে পারে; এই স্টুডিওর জাক মার্ত্যাঁ এবং বব দ্য মুর নামক দুই প্রধান কর্মী দুঃসাহসী টিনটিন সিরিজের পরবর্তী খণ্ডগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর প্রথম বিয়ে ভেঙে পড়ার পর ব্যক্তিগত অস্থিরতার মধ্যেই তিনি ''তিব্বতে টিনটিন'' তৈরি করেন, যেটি ছিল তাঁর নিজের প্রিয় কাজ। পরবর্তী বছরগুলোতে তাঁর সৃষ্টিশীলতা কিছুটা হ্রাস পায় এবং তিনি বিমূর্ত শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন, যদিও তা সফল হয়নি।
অ্যার্জের কাজগুলো তাঁর পরিচ্ছন্ন আঁকার শৈলী এবং সুপরিকল্পিত গবেষণানির্ভর কাহিনির জন্য সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা এবং কম্পিউটার গেম সহ বহু মাধ্যমে রূপান্তর হয়েছে। তিনি এখনও ইউরোপে বিশেষ করে কমিক বই জগতে এক শক্তিশালী প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হন। বেলজিয়ামে তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়: ২০০৯ সালে লুভ্যাঁ-লা-ন্যভে অ্যার্জে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইকিপিডিয়া দ্বারা উপলব্ধ